কলেজের ইতিহাস
রাজধানী ঢাকার উপকন্ঠে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের লীলাভূমি গাজীপুর জেলার এক অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজ। জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঐতিহাসিক ভাওয়াল রাজপ্রাসাদের পূর্ব কোণ ঘেঁষে অপরাজেয় অহংকারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এই গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজ।
গাজীপুর জেলার নারী উচ্চ শিক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ১৯৯২ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর কলেজটির শুভযাত্রা সূচনা হয়। আর এই শুভযাত্রায় যিনি নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তিনি হলেন তৎকালীন গাজীপুর-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব অধ্যাপক এম.এ মান্নান। এ মহতী উদ্যোগকে নৈতিক ও সামাজিক সমর্থন দান করে কলেজ প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন ঐ সময়কার গাজীপুর পৌরসভার স্বনামধন্য চেয়ারম্যান এবং বর্তমান গাজীপুর-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য জনাব আলহাজ্ব এ্যাড. আ.ক.ম মোজাম্মেল হক। পরবর্তীতে গাজীপুর-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মরহুম জননেতা জননেতা শহীদ আহসান উল্ল্যাহ মাষ্টার কলেজের সভাপতি হিসাবে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে কলেজটির উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রাখেন এবং জাতীয়করণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তাঁরই সুযোগ্য পুত্র গাজীপুর-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য জনাব জাহিদ আহসান রাসেল কলেজের সমস্যাসমূহ চিহৃিত করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তা সমাধানের প্রক্রিয়ায় জোড়ালো ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
যাদের একনিষ্ঠ ভূমিকা ও সমর্থনে কলেজটির প্রতিষ্ঠা বাস্তবে রূপ দান সম্ভব হয়েছে তারা হলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, বিশিষ্ট সমাজসেবক ড. মোঃ কবির হোসেন তালুকদার, জনাব মোঃ আবু তাহের, জনাব মীর হালিমুজ্জামান ননী, জনাব মোঃ হাবিবুর রহমান, জনাব শওকত ইকবাল, জনাব মোঃ নূরুল ইসলাম (ভাওয়াল রত্ন), অধ্যাপক মোঃ শহীদুল্লাহ্, জনাব গাজী মোকারিম, জনাব আব্দুস সাত্তার মিয়া, জনাব আব্দুল মজিদ তথা গাজীপুরের সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষানুরাগী, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী এবং উদ্যোগী ব্যক্তিবর্গ।
প্রাথমিক অবস্থায় জয়দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়। সাংগঠনিক কমিটির সদস্য সচিব জনাব মোঃ আবদুল মজিদ, অধ্যাপক মোঃ শহীদুল্লাহ, জনাব শওকত ইকবাল, জনাব মোঃ হাবিবুর রহমান, জনাব সিরাজুল হক মোল্লা, জনাব মোঃ এমদাদুল হক, সহকারী অধ্যাপক জনাব মোঃ শাহাবুদ্দিন মোল্লা প্রমুখ উপস্থিত হয়ে ছাত্রী ভর্তির কাজে সহযোগীতা করেন। মাননীয় সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব অধ্যাপক এম.এ মান্নান সাহেবের ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ স্কাউট-এর জাতীয় কমিশনার জনাব মঞ্জুরুল করিমের নির্দেশে অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ির স্থানটিতে গাজীপুর মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার অনুমতি লাভ করে। এজন্য তাঁকে এ কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং এলাকাবাসী চিরকাল স্মরণ রাখবে। স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিবর্গ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, বাজার ব্যবসায়ী সামতি, ইটভাটা সমিতি, পরিবহন সমিতি, সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসসহ বহু সংস্থার আর্থিক আনুকূল্যে কলেজের প্রাথমিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে।
২ নভেম্বর ১৯৯২ হতে মানবিক বিভাগে ১৪৩ জন ও বিজ্ঞান বিভাগে ১০জন সর্বমোট ১৫৩জন ছাত্রী নিয়ে ক্লাশ শুরু করা হয়। ১৯৯৩-৯৪ শিক্ষাবর্ষ হতে কলেজে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। কলেজ যাত্রার সময় হতে ১৯৯৬সাল পর্যন্ত কলেজ প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব অধ্যাপক এম.এ. মান্নান কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। জনাব কবির হোসেন তালুকদার, সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বি.এ.আর.আই কলেজ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য যিনি কলেজ পরিচালনা পরিষদের সদস্য হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন এবং অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মোঃ আবদুল মজিদ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ জনাব আবদুল মজিদ এর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং একঝাঁক তরুণ মেধাবী শিক্ষকের মানসম্পন্ন শিক্ষাদান ও ছাত্রীদের ভাল ফলাফলের জন্য সৃষ্টিলগ্ন থেকেই কলেজটি সকলের কাছে প্রশংসিত হতে থাকে এবং অতি অল্পদিনের মধ্যেই জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি অর্জন করে।
১৯৯৭ সাল কলেজের ইতিহাসের এক স্বর্ণোজ্জল অধ্যায়। এ সময়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার এক মহান উদ্যোগে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয় এবং কলেজ গভর্ণিং বডির সম্মনিত সভাপতি মরহুম জননেতা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের সার্বিক সহযোগিতা ও দিক নির্দেশনায় কলেজটির জাতীয়করণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এ সময়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন জনাব মোঃ তাফাজ্জুল হোসেন, প্রভাষক, ইসলাম শিক্ষা বিভাগ এবং গভর্ণিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি হিসাবে ছিলেন ড. মোঃ ফরিদ আহম্মদ, প্রভাষক, ভূগোল বিভাগ ও জেবুন্নেছা, প্রভাষক, ইংরেজী বিভাগ। কলেজ জাতীয়করণের কাজ সম্পাদনের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহবায়ক ছিলেন ড. মোঃ ফরিদ আহম্মদ, প্রভাষক, ভূগোল বিভাগ, সদস্য- মোঃ আনিছুর রহমান, প্রভাষক অর্থনীতি এবং সদস্য- এ.এইচ.এম রফিকুল ইসলাম, প্রভাষক রসায়ন বিভাগ।
মাত্র ১৫৩ জন ছাত্রী নিয়ে কলেজটির যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানেউচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ছাত্রীসংখ্যা প্রায় ২০০০। এ কলেজ থেকে পাশ করা মেধাবী ছাত্রীরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপনা, সামরিক অফিসারসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। তাছাড়া জাতীয় পর্য়ায়ে নানাধর্মী সহোযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সাফল্যের উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ ১৮-১০-২০১০ ইং তারিখে যোগদান করেছেন। তিনি কলেজে যোগদান করেই কলেজের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষে নানাবিধ কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন। ইতোমধ্যেই কলেজটিতে গাজীপুর-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব জাহিদ আহসান রাসেল এর সহযোগিতায় ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষ হতে ডিগ্রী কোর্স চালু হয়েছে এবং একাদশ শ্রেণীতে ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষ হতে কম্পিউটার বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যা ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। ইতিমধ্যেই কলেজে সহকারী অধ্যাপকের ০৯টি (বাংলা, ইংরেজী, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রানীবিদ্যা) পদ সৃষ্টি করা হয়েছে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইন্টারেকটিভ ওয়েব সাইট খোলা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন-২০২১ বান্তবায়নের লক্ষে ইতিমধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা বোর্ডের সাথে সামঞ্জস্য রেখে অন লাইনে ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষে রেজিষ্ট্রেশন ও ফরম পূরণ এর কাজ সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করা হয়েছে। কলেজটির এই ধারাবাহিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে একদিন দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নীত হবে গাজীপুরবাসীর এটাই প্রত্যাশা।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস